
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::
ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রু তার রাজকীয় উপাধি ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ এবং অন্যান্য সম্মানসূচক খেতাব ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার বাকিংহাম প্যালেস থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজা তৃতীয় চার্লস ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রিন্স অ্যান্ড্রু এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আর ‘ডিউক অব ইয়র্ক’, ‘নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অব দ্য রয়্যাল ভিক্টোরিয়ান অর্ডার’ ও ‘রয়্যাল নাইট কম্প্যানিয়ন অব দ্য অর্ডার অব দ্য গার্টার’ উপাধিগুলো ব্যবহার করবেন না।
অ্যান্ড্রু বলেন, ‘মহামান্য রাজা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা শেষে আমরা মনে করেছি, আমার বিষয়ে চলমান অভিযোগসমূহ রাজপরিবারের দায়িত্ব ও কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে। আমি পরিবার ও দেশের স্বার্থে আমার উপাধি ও সম্মানসূচক খেতাবগুলো ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তবে তিনি ‘প্রিন্স’ উপাধিটি ধরে রাখবেন, যা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত হওয়ায় আইনত বাতিলযোগ্য নয়।
রাজপ্রাসাদ সূত্রে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্ত রাজা চার্লস ও প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়ামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলোচনার পর নেওয়া হয়। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
অ্যান্ড্রুর সাবেক স্ত্রী সারা ফার্গুসনও ‘ডাচেস অব ইয়র্ক’ উপাধি আর ব্যবহার করবেন না। তবে তাদের দুই কন্যা, প্রিন্সেস বিট্রিস ও প্রিন্সেস ইউজেনির উপাধি অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু গত কয়েক বছর ধরে যৌন হয়রানির অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েন। প্রয়াত মার্কিন ব্যবসায়ী জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও অভিযুক্ত ভার্জিনিয়া জিউফ্রের মামলার পর থেকে তিনি জনজীবন থেকে সরে দাঁড়ান।
সম্প্রতি জিউফ্রের মৃত্যুর পর প্রকাশিত তার স্মৃতিকথার কিছু অংশে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ ওঠে, যা রাজপরিবারে পুনরায় অস্বস্তি সৃষ্টি করে। অ্যান্ড্রু অবশ্য অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন এবং ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি করেন কোনো দায় স্বীকার ছাড়াই।
অ্যান্ড্রু এর আগে সামরিক পদ, দাতব্য সংস্থার দায়িত্ব ও ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’ উপাধি থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন। এবার তিনি রাজকীয় খেতাব ও সম্মানও ব্যবহার বন্ধ করবেন বলে জানানো হয়।
ব্রিটিশ রাজনীতিতে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। লেবার এমপি র্যাচেল মাসকেল ‘রিমুভাল অব টাইটেলস বিল’ পাসের দাবি জানিয়েছেন, যেন রাজা সংসদের অনুমোদন ছাড়াই উপাধি প্রত্যাহার করতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত রাজতন্ত্রের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং প্রিন্স অ্যান্ড্রুর জনজীবনে সম্পূর্ণ পতনের প্রতীক।